
কেউ কেউ বলেন, দার্জিলিং যদি হয় রূপের রানী তা হলে শিলং হচ্ছে রাজা।
ম্যাপ দেখে দূরত্ব কুড়ি কিলোমিটারের কম হলেও সীমান্তের যেখানে ইমিগ্রেশন অফিস আছে, সেই তামাবিল থেকে চেরাপুঞ্জি যেতে আপনাকে ঘুরতে হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ।
মেঘালয় ইংরেজী (Meghalaya) উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব দিকে অসম (আসাম) রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অবস্থিত। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং।
মেঘালয় হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। কবিদের অনুপ্রেরনার ও চিত্রকরদের ক্যানভাস। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা হয়। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। ক্যালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙ্গিন মুহুত্ব কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। মেঘালয় সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অত্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। মেঘালয় পাঁচটি প্রশাসনিক জেলায় ভাগ হয়েছে- জয়িন্তা পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম গারো পাহাড়, পূর্ব এবং পশ্চিম খাসি পাহাড়।
শিলং ইংরেজী (Shillong), উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। শিলং বাংলাদেশ -ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভূটান-ভারত সীমান্তের প্রায় ১০০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। এটি খাসি পাহাড়ে প্রায় ১৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
শিলংয়ে সারাবছর মনোরম আবহাওয়া মেলে। তবে মার্চ ও জুন মাস বেড়াতে যাওয়ার আদর্শ মরসুম।
এখানে রয়েছে পাইন অরণ্য, জলপ্রপাত এবং পার্বত্য জলধারার সমারোহ। এক সময় এটি ”প্রাচ্যেও স্কটল্যান্ড’’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে শহরটি ধবংস হয়ে যায় এবং এরপর এটিকে পুনরায় গড়ে তোলা হয়।
কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সিলেট, সেখান থেকে বাসে কিংবা সিএনজি স্কুটারে তামাবিল। ভারতের পাহাড়গুলোর ঠিক পাদদেশে বাংলাদেশের এই প্রান্তে সমতলভূমিতে ইমিগ্রেশন-কাস্টম অফিস।
সীমান্ত পার হলেই জায়গাটার নাম ডাউকি। ইমিগ্রেশন-কাস্টমের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ভাড়া করতে হবে ট্যাক্সি। শুরুতে শিলং যাওয়াই ভালো। শিলং শহর আর তার আশপাশের জায়গাগুলো ঘুরে বেড়িয়ে তারপর সেখান থেকেই এক দিনের জন্য চেরাপুঞ্জি ঘুরে আসা যাবে।
আর যারা শুধু চেরাপুঞ্জি যেতে চান, তারা ডাউকি থেকেই ট্যাক্সি ভাড়া করবেন চেরাপুঞ্জিতে। তবে সেখানে থাকার মতো বেশি হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি, ফলে আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে বিপাকে পড়ে শিলং চলে যেতে হতে পারে। শিলঙে ভালো মানের হোটেলের ভাড়া ১৫০০-২০০০ রুপি/দিন।
শিলং শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি থাকার জন্য চমত্কার একটি ব্যবস্থা আছে; নাম চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট। এটিও আগে থেকে বুকিং দিয়ে যেতে হবে।
পাহাড়ের নির্জনে এই রিসোর্টের আশপাশেও রয়েছে ভ্রমণের অনেকগুলো জায়গা। শিলংয়ে হোটেলে বসেই আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোয় বেড়ানোর জন্য হরেকরকম প্যাকেজ পাবেন। এ ছাড়া চেরাপুঞ্জি বেড়ানোর প্যাকেজও পাবেন এখান থেকেই।
পরিবহনঃ
ভাড়া করা ট্যাক্সিই শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো বাহন। তবে বড় দল হলে শিলং থেকে বাস ভাড়া করেও চেরাপুঞ্জি বেড়িয়ে আসা যায়। যারা অহরহ কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় বেড়াতে যান তাদের জন্য বলে রাখি, শিলং বা চেরাপুঞ্জিতে থাকা, খাওয়া এবং গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর খরচটা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কিছুটা বেশি। তামাবিল সীমান্তে ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়ার মতো ব্যাংক নেই, এ জন্য বেশ খানিকটা দূরে যেতে হতে পারে। তাই ঢাকা থেকেই ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে যাওয়া ভালো।
এ ছাড়া সীমান্ত পার হওয়ার পর বেনাপোল কিংবা চেংড়াবান্ধার মতো মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগও খুব সীমিত। এমনকি শিলংয়ের মতো শহরেও ডলার ভাঙানো সহজ নয়, টাকা ভাঙানো প্রায় অসম্ভব। তাই প্রাথমিক ঘোরাফেরার জন্য যতদূর সম্ভব সীমান্ত এলাকাতেই বেশ কিছু ডলার ভাঙিয়ে নিন। এরপর শিলংয়ে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে ডলার ভাঙাতে হবে।
অন্যান্যঃ
শিলংয়ে খাবার জায়গা দেদার। রকমফেরও অঢেল। বার্গার, পিৎজা, মিল্কশেক, স্যাণ্ডউইচের দোকান রাস্তার মোড়ে হামেশাই পাওয়া যায়। চীনে খাবার ও তিব্বতি মোমো-থুকপাও পাওয়া যায় বেশ কিছু রেস্তরায়। স্থানীয় খাবারের দোকান তেমন না থাকায় খোজ নিতে পারেন ট্যুরিস্ট লজের ক্যান্টিনে। মনে রাখা দরকার, ভারতের এই অংশে সাধারণত আমিষ খাদ্যের প্রচলন আছে। নিরামিষ খাবারের সন্ধান পাওয়া যাবে মারওয়াড়ি ভোজনালয়ে ও শিলংয়ের কিছু বাঙালি রেস্তরায়।
শিলং শহরে পুলিশের সদর দফতরের ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২২৪৪০০/ ১০০।
আরও তথ্য পেতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ‘মেঘালয় পর্যটন দফতরে, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৬২২০।
তথ্য পাওয়া যাবে ভারতীয় পর্যটন দফতরেও, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৫৬৩২।
মেঘালয়ে সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষা খাসিয়া। পরদেশিদের সঙ্গে অবশ্য হিন্দি-ইংরেজি মেশানো এক মিশ্র ভাষায় এরা কথা বলেন।
সূত্রঃ আর্থ ফাইন্ডার ট্যুরস এন্ড ট্র্যাভেলস
ভ্রমণ
ঢাকার কাছাকাছি জনপ্রিয় কয়েকটি পর্যটন স্পট

ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ হবে না সবার। যারা ঢাকা থাকবেন তারা চাইছেন আশপাশে কোথাও থেকে ঘুরে আসবেন। কম সময়ে পরিবার নিয়ে ঢাকার কাছাকাছি ঘোরা যায় এমন অনেক সুন্দর জায়গা আছে। যেখানে আপনি একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন। ঢাকার অদূরে জনপ্রিয় কয়েকটি টুরিস্ট স্পট সম্পর্কে জানুন—
লালবাগ কেল্লা
পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত লালবাগ কেল্লা। মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থলও এটি। পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে পরী বিবির মাজার। এখানে আছে দরবার হল, নবাবের হাম্মামখানা। আছে শাহী মসজিদ। রয়েছে একটি জাদুঘরও। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এটি।
আহসান মঞ্জিল
নামে হয়তো আহসান মঞ্জিলকে অনেকেই জানেন। কিন্তু পুরান ঢাকার যানজটের কথা চিন্তা করে অনেকেই ওদিকে পা বাড়ান না। তবে এই ফাঁকা ঢাকায় একবার ঢু মারতে পারেন আহসান মঞ্জিলে। ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোঘল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
পানাম নগর
সোনারগাঁ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পানাম নগর। উনিশ শতকের প্রথম দিকে এটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ইংরেজরা এটিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে মূলত ঢাকাই মসলিন কাপড়ের কেনাবেচার জন্য। এ ছাড়াও মুঘল আমলে এই এলাকায় বেশ কিছু ব্রিজ নির্মাণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ এখনো আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে পানাম নগরে।
পদ্মা রিসোর্ট
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা সংলগ্ন পদ্মার বিস্তৃত চরজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন পদ্মা রিসোর্ট। এ রিসোর্টে দিনদিন পর্যটন বাড়ছে। পদ্মা রিসোর্ট দেখলে মনে হবে চরে যেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ জেগে আছে। সাড়ে তিন শ শতাংশ জমির বিশাল বিস্তৃত চরে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য নিয়ে পদ্মা রিসোর্টের কটেজগুলো (কুড়েঘর) নির্মাণ করা হয়েছে। নদীরপাড় সংলগ্ন পদ্মা নদীঘেরা চরের মধ্যে কুড়েঘর ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পদ্মা রিসোর্টকে মনোমুগ্ধকর করে রেখেছে।
ড্রিম হলিডে পার্ক
ড্রিম হলিডে পার্ক ঢাকার পাশেই নরসিংদী জেলায় অবস্থিত অন্যতম থিম পার্ক। পরিবার পরিজনদের সারাদিন হৈচৈ আর আনন্দে মাতামাতি করতে অথবা পিকনিকের আয়োজন করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। রাতে থাকার জন্যও রিসোর্টে রয়েছে সুব্যবস্থা।
নিকলী হাওর
খোলামেলা পরিবেশে স্নিগ্ধ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসতে পারেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর থেকে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে যেতে পারেন কিশোরগঞ্জ শহরে, সেখান থেকে সিএনজিতে করে নিকলী ঘাট। ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে দেখুন হাওর। মনে রাখবেন, বর্ষার শেষ দিকে হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
আড়িয়াল বিল
ঢাকার খুব কাছেই মুন্সিগঞ্জের এক ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল আড়িয়াল বিল। এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ। বিলের পানিতে পা ডুবিয়ে চমৎকার একটা দিন পার করতে পারেন।
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
ঢাকা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে বামে রূপগঞ্জ উপজেলা। একটু সামনেই রূপসী বাসস্টেন থেকে সিএনজি করে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।
বাংলার তাজমহল
২০০৮ সালে সোনারগাঁয়ে আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত হয় ‘বাংলার তাজমহল’। বিভিন্ন স্থানে বসানো টাইলস, বিদেশি ডায়মন্ড পাথর, গম্বুজের ওপরে ব্রোঞ্জের তৈরি চাঁদ-তারায় দৃষ্টিনন্দন এ তাজমহল।
ভ্রমণ
কক্সবাজারের আকাশে রোমাঞ্চকর প্যারাসেইলিং

আকাশে উড়ে পাহাড়, সমুদ্র দেখার সাধ কার না মনে জাগে! আজন্ম লালিত এই সাধ পূরণ করা সম্ভব প্যারাসেইলিংয়ের মাধ্যমে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটকদের কাছে প্যারাসেইলিংয়ের কদর অনেক। বাংলাদেশে প্যারাসেইলিং করে রোমাঞ্চর অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং করা যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার ভ্রমণ আসা পর্যকটরা প্যারাসেইলিংয়ের আনন্দ নিচ্ছেন।
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সৈকতের হিমছড়ি দরিয়ানগর পয়েন্টে মেরিন ড্রাইভের দক্ষিণ পাশের সৈকতে প্যারাসেইলিং করা হয়। দুইটি প্রতিষ্ঠান সেখানে পর্যটকদের জন্য প্যারাসেইলিংয়ের আনন্দ উপভোগের সুযোগ দিচ্ছেন। সেখানে গেলেই চোখে পড়বে প্যারাসুটে চড়ে মানুষ আকাশে উড়ছে। নিচে উত্তাল সমুদ্র।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্যারাসেইলিংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দরিয়ানগরে ভিড় করেন পর্যটকরা। এ আনন্দ পেতে ব্যয় করতে হবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
একটি প্যারাসুটে বেঁধে দেওয়া হবে আপনাকে, একটি স্পিড-বোট আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে সমুদ্রে, আর সেই তীব্র গতিতে আপনি ঠিক একটা ঘুড়ির মতই উড়তে থাকবেন।
পাখির মতো সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে বেড়ানোর একমাত্র উপায় প্যারাসেইলিং। রোমাঞ্চকর এ প্যারাসেইলিং এর স্বাদ নেওয়ার সবচেয়ে সুন্দর স্থান হলো সৈকত। বর্তমানে দরিয়ানগরে দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্যারাসেইলিং করার ব্যবস্থা আছে।
প্যারাসেইলিং করার কয়েকটি প্যাকেজ আছে। খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ২০০০ টাকার রাইডে আপনি শুধু আকাশে উড়তে পারবেন। ২৫০০ টাকার রাইডে আপনি আকাশেও উড়তে পারবেন আবার নামার সময় সমুদ্রের পানিতে হালকা পা স্পর্শও করতে পারবেন।
৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত আপনি প্যারাসেইলিংয়ের মাধ্যমে পাখির মতো আকাশে উড়তে পারবেন। ৩০০-৫০০ ফুট পর্যন্ত উপরে ভেসে বেড়াবেন।
১২ বছরের নিচে, দুর্বলচিত্তের মানুষ কিংবা হার্টের রোগী ছাড়া সবাই নিশ্চিন্তে প্যারাসেইলিং করতে পারেন। তবে আপনার যদি উচ্চতা ভীতি থাকে তবে প্যারাসেইলিং না করাই ভালো।
প্যারাসেইলিং করার আগে অবশ্যই উড্ডয়নকারীকে একটি বন্ডে সই করতে হয়। বন্ডে লেখা থাকে প্যারাসেইলিংয়ের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় নেবে না সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই আপনাকে এই উপভোগ করতে হবে।
যদিও যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা দুর্ঘটনার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে প্যারাসেইলিং রাইড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এজন্য একটি স্পিডবোট, একটি জেট স্কি রেডি থাকে আপদকালীন সময়ের জন্য।
প্যারাসেইলিংয়ের সময় হাতে মোবাইল ফোন, চোখে চশমা না রাখাই ভালো। আকাশে ওড়ার রোমাঞ্চকর এই দৃশ্য ধারণ করতে চাইলে বডি মাউন্টেড অ্যাকশন ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেলফি স্টিকের মাধ্যমে ফোনে ভিডিও ধারণ না করাই ভালো। হাত থেকে ফসকে সাগরে আপনার ফোনের সলিল সমাধি হতে পারে।
ভ্রমণ
নিকলী হাওর ভ্রমণের খুঁটিনাটি

“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে চাই না আর” কবি জীবনানন্দ দাশের উক্তির সঙ্গে মিলে বলতে হয় যে প্রকৃতির অকৃত্রিম, অনাবিল ও অফুরন্ত সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এর প্রতি পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাহাড়, নদী ও হাওরের নির্মল উজ্জ্বলতা। এমনই এক অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় অবস্থিত এই হাওর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষাকালে হাওরের দখিনা বাতাসে নৌকার ভেসে চলা, দ্বীপের মত গড়ে ওঠা ঘরবাড়ির সৌন্দর্য এক অপরূপ দৃশ্যপট তৈরি করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে রূপ পাল্টিয়ে ভিন্ন সাজে সেজে ওঠে পুরো হাওর এলাকা। জ্যোৎস্না রাতে নিকলী হাওরের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হাওরের তরতাজা মাছের স্বাদ পেতে, স্বচ্ছ পানির খেলা দেখতে, দ্বীপের বুকে ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নিকলী হাওর।
উপযুক্ত সময়
হাওরের পানির রূপ দেখতে হলে নিকলী ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে আগস্ট মাস। বর্ষাকালে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির বুকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে উপভোগ্য। হাওরের ভিন্ন রূপ দেখার জন্য যেকোনো সময় যেতে পারেন।
নিকলী যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেন দুই ধরনের যানবাহনই ব্যবহার করতে পারবেন নিকলী হাওরে যাওয়ার জন্য। তবে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব কিংবা আশেপাশের এলাকা থেকে সিএনজি করে যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে ট্রেনে গিয়ে একদিনে ঘুরে আসা সম্ভব নিকলী হাওর। এ জন্য আন্তঃনগর এগারো সিন্ধু ট্রেনে উঠতে হবে। এই ট্রেন বুধবার বন্ধ থাকে। সপ্তাহের ৬ দিনই কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে বিমানবন্দর, টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব স্টেশন হয়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। শ্রেণি অনুসারে ট্রেনের টিকেট ভাড়া ১২৫-২৫০ টাকা। ট্রেনে গেলে সকাল ১১ টার মধ্যে গচিহাটা স্টেশনে পৌঁছানো সম্ভব। স্টেশন থেকে ইজিবাইকে জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৩৫ টাকা। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩০০-৩৫০ টাকা ভাড়া নেবে। এতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। একদিনে ভ্রমণ করে ফেরার সময় বাসে আসতে হবে।
ঢাকা থেকে বাসে নিকলী ভ্রমণের উপায়:
বাসে নিকলী হাওরে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ঢাকার গোলাপবাগ, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড থেকে যাতায়াত কিংবা অনন্যা সুপার সার্ভিস বাসে উঠতে হবে। প্রতিদিন ভোর ৫.৩০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ১৯০-২২০ টাকা। বাসে আসলে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি স্টেশনে আসতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা, সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভে ভাড়া খরচ হবে ৩৫০-৪০০ টাকা এবং নিকলী যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। কিশোরগঞ্জ বা ভৈরব থেকেও রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে যাওয়া যায় নিকলী হাওরে। এতে সময় ও ভাড়া খরচ হবে কম।
খাবার ব্যবস্থা:
নিকলী হাওরে ভাল মানের খাবার হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সেতু, ক্যাফে ঢেউ সবচেয়ে ভাল। হাওরের তাজা মাছ ও লোভনীয় অনেক খাবার দিয়ে পেট ভরে খেতে পারবেন এসব হোটেলে।
কীভাবে ঘুরবেন:
হাওরের সৌন্দর্য দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে নৌকা ভ্রমণ করতে হবে। নৌকা ভ্রমণ করার জন্য ছোট বা বড় নৌকা ভাড়া করতে পারেন। ছোট নৌকায় ঘণ্টায় ভাড়া ৪০০-৫০০ আর বড় নৌকায় ঘণ্টায় ভাড়া নিবে ৭০০-৮০০। নৌকায় ভাসতে ভাসতে হাওরের চারপাশের মনোমুগ্ধকর রূপ দেখতে দেখতে প্রথমে যাবেন ছাতিরচর গ্রামে। বর্ষায় পানি বেশি থাকে বিধায় হাওরে গোসল করতে পারেন। তবে নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়া ভাল। জলাবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যান মনপুরায়। আধো ভাসমান চরে কিছুক্ষণ সময় কাটান। উন্মুক্ত হাওরে শেষ বিকেলের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পুনরায় ফিরে আসেন নিকলী বেড়িবাঁধে। ফিরে আসার জন্য কটিয়াদি বাস স্টেশন থেকে সন্ধ্যার বাসে উঠে পড়ুন।
থাকতে হলে করনীয়
নিকলী তে খুব ভাল মানের আবাসিক হোটেল নেই। রাত থাকতে হলে আপনাকে কিশোরগঞ্জ সদরে চলে আসতে হবে। চাইলে নৌকায় বা ক্যাম্পিং করে রাত কাটাতে পারেন। এতে নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখতে হবে।
নিকলীর আরও কিছু দর্শনীয় স্থান:
গুরই শাহে জামে মসজিদ, নিকলী বেড়িবাঁধ, পাহাড় খার মাজার, গুরই প্রাচীনতম আখড়া।
ভ্রমণ
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। কভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত খাত হিসেবে অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড়িয়ে এ বছর পালিত হচ্ছে দিবসটি। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে ১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন সংস্থা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে জাতিসংঘ। তবে সংস্থাটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৪ সালে। সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনে ১৯৮০ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা এ বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গ্রামীণ উন্নয়নে পর্যটন’কে অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।’ একই সাথে বিশ্ব দরবারে দেশের পর্যটন শিল্পকে কার্যকরভাবে তুলে ধরার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশের অন্যতম এজেন্ডা ‘গ্রাম হবে শহর’ যা এ বছর জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত প্রতিপাদ্যের সাথে অত্যন্ত সংগতিপূর্ণ। পর্যটন বিশ্বে শ্রমঘন এবং সর্ববৃহৎ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত।’
ভ্রমণ
করোনাকালে বিনামূল্যে বিশ্বভ্রমণ!

করোনাভাইরাস প্রায় গোটা বিশ্বকে কবজা করার পর ভ্রমণের ইচ্ছা শুধু যেন স্বপ্নই হয়ে উঠেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক দেশ নিজস্ব সীমান্ত বন্ধ করেছে। দেশের মধ্যেও ভ্রমণের ওপর কড়াকড়ি দেখা গেছে। প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে লকডাউনের ফলে কার্যত গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। শুধু মানুষ নয়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যাত্রীবাহী বিমান আকাশে উড়তে পারেনি। এমন জরুরি পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় অনেক শহর ও অঞ্চল বিনামূল্যে ভার্চুয়াল ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে।
যেমন চীনের প্রাচীর বরাবর হাঁটার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পেরুর বিখ্যাত মাচুপিচু পর্বত নিজের মতো করে আবিষ্কার করা যাচ্ছে। জর্দানের পেত্রা দেখে মুগ্ধ হওয়াও সম্ভব অথবা নেদারল্যান্ডসের টিউলিপবাগানের দৃশ্য উপভোগ করা যাচ্ছে। প্রকৃতিপ্রেমীরা অনেক জাতীয় পার্কের রূপ দেখতে পাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিখ্যাত ইয়োসেমাইট ঘুরে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বের প্রায় দুই হাজার ৫০০ মিউজিয়াম নিজস্ব ভার্চুয়াল দরজা খুলে দিয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ বসার ঘর থেকেই মঙ্গল গ্রহে টহল দিতে পারছে। গ্রিস নিজস্ব পর্যটন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। অতিথিরা ভার্চুয়াল জগতে গ্রিসের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছে। ভবিষ্যতে পর্যটন আরও বেশি করে স্থানীয় পর্যায়ে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে বলে একটা প্রত্যাশা জেগে উঠছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে